বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, একদিন বললেন, “তুমি ফিল্মে যোগ দাও বিকাশ, তোমার হবে।” ১৯৪৬ সাল, বীরেনবাবুর কথা শুনে, অল ইন্ডিয়া রেডিযওর প্রেজেন্টার ও অ্যানাউনসারের চাকরি ছেড়ে ,এবারে অভিনয়ে বিকাশ ঘটলো বিকাশ রায়ের।
১৯৪৭, ৭ই ফেব্রুয়ারি, মুক্তি পেল হেমেন গুপ্তের ছবি ‘অভিযাত্রী’। রাধামোহন ভট্টাচার্য, নির্মলেন্দু লাহিড়ী, কমল মিত্র, শম্ভু মিত্র, বিনতা রায়ের মতো শিল্পীদের সঙ্গে ,প্রথম অভিনেতা হিসেবে ,আন্তপ্রকাশ বিকাশ রায়ের। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পরামর্শ, সঠিক প্রমানিত হল অচিরেই। সত্যিই দূরদৃষ্টি ছিল বটে মানুষটার!
ছবির নাম ‘৪২’, সময়টা ১৯৫১’এর, ওই আগষ্ট নাগাদ, ভারত ছাড় আন্দোলনের পটভূমিতে তৈরী, এই ছবিতে, ক্রুঢ় অফিসার ,মেজর ত্রিবেদীর ভূমিকায় বিকাশ রায়। ম্যাটিনি শো শেষে, এক দল কলেজ পড়ুয়া ,ছুটছে ইন্দ্রপুরী স্টুডিওর দিকে। দাবী বিকাশ রায়কে ,তাদের হাতে তুলে দিতে হবে, তারা বদলা চান। হল্লা শুনে, বিকাশ বেরিয়ে আসতেই, এক যুবক চটি ছুড়ে মারল তাঁকে লক্ষ্য করে, সেই চটি মাথায় নিয়ে বিকাশ বলেছিলেন, “আজ আমার অভিনয় সার্থক।”
অভিজাত কন্ঠস্বর ও ডায়লগ বলার কায়দা, তাকে অনন্য স্থান দেয় বাংলা চলচিত্রে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৮৭, দীর্ঘ অভিনয় জীবনে ২৪৮টি ছবি রিলিজ হয় তাঁর। শ্রেষ্ঠ ছবিগুলোর মধ্যে আছে, ৪২, রত্নদীপ, জিঘাংসা, টাকা আনা পাই, কীর্তিগড়, মরুতীর্থ হিংলাজ, আরোগ্য নিকেতন ও আরও অনেক।
শুধু অভিনয় নয়, লেখালেখি, পরিচালনা, প্রযোজনা সর্বত্র ছিল, তাঁর অবাধ যাতায়াত। যখন যে কাজটি করেছেন ,তাতে নিজেকে সবটুকু নিবেদন করেই করেছেন। রেডিওতে কাজ করার সময়, মাইক্রোফোনের খুঁটিনাটি থেকে ,৪২ সিনেমাতে হেমেন গুপ্তের সহকারী হয়ে ,ফিল্ম তৈরীর যাবতীয় কারিগরি বিষয় জেনে নেওয়া,বাংলার ছবির দেওয়ালে কান পাতলে শোনা যায় তাঁকে নিয়ে হরেক রকম গল্প।
Share Your Perception