যদি আমরা কথা বলতে না পারতাম, কি হতো? এতো আধুনিকীকরণ, সব কেমন অধরা থাকত, ভাবা যায়? এই যে লিখছি, যদি শব্দ না থাকে! ভাষা! ভাষা না থাকে যদি? এই সময়ে দাঁড়িয়ে যদি হঠাৎ সব উবে যায়? আমার তো মনে হয়, আজকে কল্পনাই করতে পারব না কিছু, ভাষা ছাড়া; বাস্তবায়ন তো দূর, বহুদূর!
চলুন শূন্যে ফিরি, একদম গোঁড়ায়। জানেন তখন কিচ্ছু ছিল না… ভাষা তো দূর, শব্দ অব্দি না। আমাদের পূর্বপুরুষরা অঙ্গভঙ্গি, ইশারা-ইঙ্গিতে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতো, বা বলা ভালো ভাবের আদান-প্রদান করতো। সেই ছোটবেলায় পড়েছি, মনে আছে, প্রাচীন গুহাচিত্রের কথা? হ্যাঁ, হোমস্যাপিয়েন্সরা ১৩০০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে গুহার গায়ে পশুর রক্ত, রঙিন ফুল-ফলের রস, খনিজ ব্যবহার করে ছবি আকঁত। কি আকঁত বলুন তো? নানা মুনির নানা মত, সব থেকে জনপ্রিয় মত হল, কোন পশুকে খাদ্য হিসাবে গ্রহন করা বেশি বিপদমুক্ত, অর্থাৎ আগামীর প্রতি নিদের্শনা থাকত এই সব ছবির মধ্যে।
মানুষের মস্তিষ্কের বিবর্তন ঘটতে থাকল, আরো-আরো শক্তিশালী, ক্ষমতাশালী মগজের সাথে সাথে তাদের ভাবনারও আমূল পরিবর্তন এলো। বিমূর্ত ভাবনার সাথে তাল মিলিয়ে সাংঘাতিক সৃজনশীল কল্পনার মিশেলে আর এক ধাপ ভাষার দিকে এগিয়ে গেল মানুষ, অর্থাৎ অপটু, জটিল নানারকমের শব্দ বের করতে শুরু করল তারা কন্ঠের মাধ্যমে। মজার বিষয়, তারা এর ব্যবহার দৈনন্দিন জীবনে করলেও তারা নিজেরাই বুঝত না এর মানে। দিন যত এগলো, এই শব্দ জুড়ে জুড়ে মালা গাঁথল এবং তারাই হয়ে উঠল ভাঙাচোরা, জোড়াতালি দেওয়া এক একটা বাক্য। ভাষার উৎপত্তি হল এই থেকেই। সেই সময় পরিবার অথবা গোষ্ঠী পিছু এক একটা ভাষা ছিল, ভাবা যায় এই বৈচিত্রের কথা? তাই তো আজ যেটুকু আছে অবশিষ্ট, তাতেই আমাদের পৃথিবীর বুকে কত হাজার হাজার ভাষা। এর পর গল্প বলা, লিপি থেকে চিঠি, ধীরে ধীরে আজকের সোশ্যাল মিডিয়া। আপনাদের সাথে অনেক গল্প করব এই নিয়ে, আরও অনেক বিষয় নিয়েও। আজ এটা ছিল মুখবন্ধ, শুরু হলো বসন্ত বৈঠার আসর। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, এই অতিমারীর সময় ঘরে থাকুন নিরাপদে।
Share Your Perception