বাইশে শ্রাবণ, দক্ষিণের বারান্দায় অবন ঠাকুর ঠায় বসে যেন রবিকাকার পশ্চিমে ঢলে পড়ার গান শুনতে পাচ্ছেন। ধূসর দিন, শ্রাবণের মাঝি তরণী বেয়ে ঘন কুয়াশায় উধাও হয়ে যায়, গীতবিতান গেয়ে ওঠে “তরী আমার হঠাৎ ডুবে যায়, কোনখানে রে কোন্ পাষাণের ঘায়”। বেদুইনের জ্বর আসে, বিশু পাগল গায়, “কোন সাগরের পার হতে আনে কোন সুদূরের ধন… ভেসে যেতে চায় মন, ফেলে যেতে চায় এই কিনারায়,সব চাওয়া সব পাওয়া।” তিনটি শালিক গুমোট মেঘের দিকে ঠাঁই তাকিয়ে থাকে, চোখের কোটরে জল জমে, “শ্রাবণঘন-গহন-মোহে, গোপন তব চরণ ফেলে, নিশার মতো নীরব ওহে সবার দিঠি এড়ায়ে এলে।” সোনাঝুরির গা বেয়ে বর্ষার অলস জল গড়িয়ে পরে, বিক্রম গেয়ে ওঠেন, “হাওয়া যেমন পাতায় পাতায় মর্মরিয়া বনকে কাঁদায়,তেমন আমার বুকের মাঝে, কাঁদিয়ে কাঁদাও গো।” চুরুলিয়ার ছেলেটা পাগলপারা হয়ে এক নাগারে বলে চলে, “বাংলা ছাড়া কি হারালো বাঙালি, কেহ বুঝিবে না আর, বাংলা ছাড়া এ পৃথিবীতে এতো উঠিবে না হাহাকার”।
শ্রাবণগগন ঘিরে ঘন মেঘ ঘোরাফেরা করে, আমারা শূন্য নদী তীরে পড়ে থাকি, সোনার তরী এগিয়ে যায় পদ্মার বাঁক বেয়ে সুদূরে… নদী তীর আরও শূন্য হতে থাকে। যখন রবি হয়ে যায় জুঁইয়ের খোঁপা আর পরিপাটি সাদা পাঞ্জাবির এলিট ক্লাসের সরলীকরণ অস্ত্র, সোশ্যাল মিডিয়ার ম্যানডেটরি পোস্টার ‘হৃদমাঝার’। কিন্তু এ কি হওয়ার কথা ছিল?
রবি তো আমাদের প্রতিজনের প্রতিদিনের উদাসী হাওয়ার পথে পথে ঝড়ে পড়া মুকুলের অবয়বহীন ভাষা।
Share Your Perception