কাঁধে একটা ভারী ব্যাগ, এক হাতে প্রেসক্রিপশন ও সিটিস্ক্যানের বড় প্যাকেট আর এক হাতে অসুস্থ ছেলের হাত,উঠলেন ভিড় লেডিসে, গন্তব্য বাড়ি। এক তিল ঠাঁই, অনড় দাঁড়িয়ে রইলেন ১০২কিমি। রাত আটটায় ট্রেন ঢুকলো স্টেশনে। এ তাঁর নিত্যনৈমিত্তিক।
রাত তিনটে আট, বাসিকাজ সেরে রান্না শেষে ধরলেন আপের ট্রেন। সবজি কিনে এনে তা বিক্রি করবেন সোদপুর বাজারে। এও তাঁর রোজনামচা।
অন্যদিকে একজন ‘এমএ-বিএড’ কালিগঞ্জ থেকে বাস ধরে পলাশী, তারপর ট্রেন ধরে দমদম, মেট্রো ধরে ধর্না মঞ্চে। হকের চাকরি পেতে ছুটে আসেন রোজ… বাসে ট্রেনে অনেকেই “আহা রে! উহু রে!” করেন বটে, তবে এই যে “যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ।সঞ্চার করো সকল কর্মে শান্ত তোমার ছন্দ।” প্রতিদিন ‘প্রতিবন্ধ’ শব্দটার সাথে লড়াই তাঁর।
আজ ষষ্ঠীর সকাল। বোধনের তোড়জোড় শুরু হবে কিছু পরেই। ইনস্টা থেকে মেকআপ স্টুডিও, সর্বত্রই চলছে শেষ মুহূর্তের রূপটান। এটা তো চেনা ছবি। এই ছবির পেছনে একটা মস্ত বড় ছবি আছে, যেখানে একমাথা রুক্ষ চুল, বনগাঁ লেডিস এ দিনরাত কোমড় বেঁধে ঝগড়া করা সকলের ‘মাসি’, যাকে ডেইলিপ্যাসেনজাররা পর্যন্ত ভালোর পর মন্দ বলতে বলতে শিউরায়, আজও সে ৮টা ২৪এর লোকালে দমদম ঢুকলো। কি এনার্জি! সিঁথি ভর্তি উপচে পড়া সিঁদুর, খাটো করে পরা কাপড় আর গালে ঠাসা জর্দা পান, ছুট লাগাল নাগেরবাজারের দিকে। তাঁর মুখ দেখে বুঝে উঠতে পারেনি কেউ, স্বামী-সন্তানের মঙ্গল কামনায় তিনিও আজ উপোসী।
দুর্গা মানে বাহির বেশের নৈপুণ্য যে নয় তা প্রমান করার কোন দায় নেই তাঁদের। অন্তরের সুস্থতা তাঁদেরকে প্রতিদিনের দৌড়ঝাঁপ করে নিজের গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদ যোগায়। এই একেকজন, কেউ কাওকে চেনে না, কোন দিন “দু’কাপ চা তিনটে” করেনি, তবুও তাঁদের চোখগুলো হুবহু এক। শান্ত, নিবিড় ও একরোখা। যেন মা দুর্গা!
আসলে দুর্গার কোন বাউন্ডারি নেই। দুর্গার কোন খাঁচা নেই। দুর্গা মুক্ত। উচ্চ তাঁর শির। প্রতিদিনের এই তেজি সুমিত্রা’দি, মিলি’দি, শাহিদা’দি, বাসন্তী’দি ও আরও অনেকে, যারাঁ নিজেই নিজের লড়াইটা লড়েন, অন্তত নিজের পিঠ নিজে চাপড়ে, পাশ ফিরে শুয়ে পরেন না।
A collaborative initiative by Romit Bandyopadhyay & Debanwita Banerjee.
Share Your Perception